জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মচারী খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে প্রধান প্রকৌশলী বরাবর জেলায় কর্মরত সকল প্রকৌশলীর স্মারক লিপি প্রদান

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের প্রকল্প বাস্তবায়নে সংকট!

বিশেষ প্রতিবেদক :

কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সদর উপজেলার সাময়িকভাবে দায়িত্বরত অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মোঃ খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর স্মারক লিপি দিয়েছেন কক্সবাজার জেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতি।

স্মারকলিপিটিতে স্বাক্ষর করেছেন কক্সবাজার জেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মরত দুইজন সহকারী প্রকৌশলী, ৮ জন উপ- সহকারী প্রকৌশলী ও একজন প্রাক্কলনিক। এরা সকলে কক্সবাজারের জেলা এবং উপজেলায় কর্মরত আছেন।

স্মারক লিপি সূত্রে জানা যায়,খোরশেদ আলমের মূল পদ হলো নৈশপ্রহরী / চৌকিদার। স্মারকলিপিতে বর্ণিত অভিযোগগুলোতে লেখা হয়,খোরশেদ আলমসহ একটি চক্র বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয়ে অসদাচরণ ও দুর্নীতিতে লিপ্ত। দপ্তরে নতুন কোন কর্মকর্তা, কর্মচারী চাকুরি করতে আসলে তাদেরকে নানারূপ হুমকি দিয়ে, ব্ল্যাকমেইল করে নিজেদের নানা তদবির বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে খোরশেদ আলম সমাজে বিভিন্ন উচ্চ পদস্থ ব্যক্তি, আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ এবং সংসদ সদস্যের নাম ব্যবহার করেন।

স্মারকলিপিতে প্রধান প্রকৌশলীকে বিনয়ের সাথে অবহিত করা হয় যে,কক্সবাজার জেলায় নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে জেলার সকল মানুষের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা, স্যানিটেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রকৌশলীগণ, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ কঠিন পরিশ্রম করে চলেছেন । প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সেবা প্রদান, জেলায় সুপেয় পানি প্রদানের কর্মযঙ্গে বিভিন্ন সরকারি – বেসরকারি সংস্থা ও জনপ্রতিনিধিগন জড়িত আছেন। কিন্তু হাতেগোনা দুই – একজন কর্মচারীর স্বেরাচারীতা, দুর্নীতি ও অসদাচরণ জেলায় অধিদপ্তরের সুনাম ক্ষুন্ন করছে।

খোরশেদ আলমের মতো কর্মচারীরা প্রায়শই প্রশাসনিক আদেশকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে অধিদপ্তরের চেইন অব কমান্ড নষ্ট করছে। নলকূপের জন্য সহায়ক চাঁদা আদায়ের নামে যেখানে সেখানে অহেতুক হস্তক্ষেপ ও দুর্নীতিতে লিপ্ত রয়েছে।

অভিযোগে আরো বলা হয়, খোরশেদ আলম সদর উপজেলার বর্তমান ও সাবেক উপ- সহকারী প্রকৌশলী ও প্রধান প্রাক্কলনিক ঢাকা সার্কেলের কাছে ম্যাসেজের মাধ্যমে চাঁদা দাবি করেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট নামে বেনামে সহকর্মীর বিরুদ্ধে অসংগত ভিত্তিহীন ও হয়রানি মূলক মিথ্যা তথ্য সংবলিত দরখাস্ত দাখিল করে। খোরশেদ আলম কুতুবদিয়া উপজেলার উপ- সহকারী প্রকৌশলীকে মোবাইলে হুমকি দেয় এবং তার কথামতো কাজ না করলে চরিত্রনাশের ভয় দেখায়।

সরকারি দলের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা পরিচয় দিয়ে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য মহোদয়ের সাথে ছবি তুলে তাদের রেফারেন্স উল্লেখ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে উদ্ধত আচরণ করেন।

এছাড়া খোরশেদ আলম সদর উপজেলা অফিসের একটি কক্ষ দখলপূর্বক বিশ্রামাঘার হিসেবে ব্যবহার করেন। টেস্টের জন্য ঠিকাদার কর্তৃক সরবরাহকৃত মালামাল ঠিকাদার কে ফেরত না দিয়ে অন্যত্রে বিক্রয় অর্থ আত্মসাৎ করেন।

কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির সভাপতি জানান, খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে জেলায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের চলমান কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়বে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী জানান, তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত না করা হলে জেলায় কর্মরত প্রকৌশলীগণ হয়তো বা একযোগে বদলীর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করবেন।
উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত একজন কর্মচারী জানান, মোঃ খোরশেদ আলমে চৌকিদার পদ হতে অফিস সহকারী পদে এবং অফিস সহকারী পদ থেকে অফিস সহায়ক কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে পদায়ন চাকুরিবিধি অনুযায়ী হয় নাই। তার পদোন্নতিতে সহকর্মীদের মধ্যে হতাশা ও বিরক্তি বিরাজ করছে। দীর্ঘদিন জেলায় কাজ করার পরেও যেখানে ভালো জায়গায় পদায়ন হচ্ছে না সেখানে কোন খুঁটির বলে খোরশেদ আলম অফিসে গরহাজির থেকেও আকাম -কুকাম করেও প্রমোশন পাচ্ছে তা বোধগম্য নয়। খোরশেদ আলম প্রায়ই নিজেকে স্থানীয় দাবি করে বাইরের জেলা থেকে আসা কর্মচারী ও প্রকৌশলীদের হুমকি-ধমকি দিয়ে থাকেন। কুতুবদিয়ায় কর্মরত এক উপ- সহকারী প্রকৌশলীকে কুতুবদিয়া ছাড়ার হুমকি দিয়ে ছিলেন।

একজন প্রকৌশলী জানান, খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অফিস মেমো আমলে না নিয়ে তাকে কেন পদায়ন করা হলো তা বোধগম্য নয়। প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা রক্ষায় অধস্তনদের সুপারিশ আমলে না আনলে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা বাড়ে। এ বিষয়টি মাননীয় প্রধান প্রকৌশলী মহোদয়ের নজরে আনা দরকার ।